ত্রিশালে ধান ক্ষেতে শাপলা ফুলের সমাহার, সৌন্দর্য উপভোগে শিশুরা

89

ফারুক আহমেদ, ত্রিশাল :
একদিকে নতুন ধানের ম ম গন্ধ, অন্যদিকে শাপলা ফুলের অপার সৌন্দর্য। এ যেনো এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো অবস্থা। ময়মনসিংহের ত্রিশালের একটি ধান ক্ষেতে এবার এমন সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে কৃষক তাদের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় নবান্নের আনন্দে ভাসছে কৃষক-কৃষাণীর মন। এরইমধ্যে অর্ধেকের বেশি ফসল মাড়াই শেষ হয়েছে। মাড়াইয়ের বাকি যে অংশটুকু রয়েছে তার মধ্যে উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী গ্রামের এক ধান ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে ধান গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কয়েকশত লাল শাপলা ফুল। এই ফুলের সৌন্দর্য মন কেড়েছে কোমলমতি শিশুদের। প্রতিদিন আশেপাশের শিশুরা ফুল তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বাড়িতে। ফুল দেখতে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আসছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অলহরী গ্রামের রাশেদ আহমেদ রিয়াদ তার ছয় কাঠার একটি জমিতে ধান চাষ করেছেন। পুরো জমিতে ধানের ফলন ভালো হলেও প্রায় অর্ধেক জমিতেই ধানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে জন্মেছে শাপলা ফুলের অসংখ্য গাছ। এ যেনো কয়েকশত ফুলের রক্তিম আভার হাতছানি। প্রতিদিনই ফুল তুলতে শিশুরা নেমে পড়ছে ধানের জমিতে। মাঝে মাঝে বড়রাও আসছে ফুল দেখতে। ক্যামেরায় স্মৃতি বন্দী করে রাখতে আবার কেউ কেউ নেমে পড়ছেন কাদামাখা পানিতে। এই ফসলী জমিতে এর আগে কখনো এমন ফুল দেখেনি কেউ।
পাশের একটি ক্ষেতেই ধান কাটছিলেন কৃষক আবুল মনসুর। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিগত কয়েকদিন ধরেই এখানে ধান কাটছি। ধান ক্ষেতে এতো বেশি ফুল ফুটতে আমি আগে কখনো দেখিনি। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে কাক ডাকা ভোর থেকেই শিশুরা আসছে। সাথে তাদের অভিভাবকরাও থাকছে। শিশুরা ফুল তুলে অনেক আনন্দের সাথে তা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। নিজ হাতে ফুল তুলতে পেরে তারা ভীষণ খুশি। তবে এভাবে নিয়মিত ফুল তুলে নিলে দীর্ঘ সময় সৌন্দর্য উপভোগে বঞ্চিত হবে মানুষ।’
ফুল তুলতে আসা স্থানীয় জয়দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোমা আফরিণ বলে, ‘ধান ক্ষেতে অনেক শাপলা ফুল ফুটেছে। আমার ছোট ভাইকে নিয়ে ফুল দেখতে আসছি। আমার ছোট ভাই আমাকে কয়েকটি ফুল তুলে দিল। ফুল আমার সবসময় পছন্দ, দেখে অনেক ভালো লাগছে। এর আগে আমার বান্ধবীরাও এসেছিল।’
তোফাজ্জল হোসেন বাদল বলেন, ‘বর্তমানে শিশুরা নির্মল আনন্দ বিনোদনের সুযোগ কম পায়। আমাদের সময় বিল-ঝিল, পুুকুরে অসংখ্য শাপলা ফুল ফুটে থাকতো। এখন তেমন দেখা যায় না। এখানের একটি ধান ক্ষেতে ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। এটা দেখে আশেপাশের শিশু ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছোট ছোট কোমলমতি শিশরা ফুল তুলতে নিজেরাই নেমে পড়ছে ধান ক্ষেতের কাদামাখা পানিতে। পুকুর বা অন্যকোন জলাশয় হলে যেটা সম্ভব ছিল না। পাশে দাড়িয়ে থেকে দাদা হিসেবে আমিও নাতি-নাতনীদের সেই সুযোগ করে দিয়েছি।’
ধান ক্ষেতের মালিক রাশেদ আহমেদ রিয়াদের মা হাসনা হেনা বলেন, ‘আমার ছয় কাঠা জমির প্রায় অর্ধেকেই শাপলা ফুল ফুটেছে। ফুল গুলো দেখতে ভালো লাগলেও শিশু-কিশোররা ফুল তুলতে গিয়ে জমির ধান নষ্ট করে ফেলছে। তবে তাদের বাঁধা দিতেও মন চায় না, তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হয়।’

পূর্বের খবরত্রিশালে অপরাধ নির্মুলে ওসি মনসুর আহাম্মদ
পরবর্তি খবরত্রিশালে শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের মতবিনিময়