
ফারুক আহমেদ, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) :
দু’বছর আগে যে বিলের পানিতে গোসল করলে সকল রোগ ভাল হতো এই আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ নারী-পুরুষ ভীড় গোসল করতো সেই বিলে। উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেও সে সময় হিমশিম খেতে দেখা গেছে। এখন সেই চেচুয়া বিলের এক কুল থেকে আরেক কুলে শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে সেজেছে নতুন সাজে। হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে শাপলা ফুলের বাহারি রকমে ফুটে উঠা ফুল দেখতে। অপরুপ মায়ার বাধনে যেন সব সুন্দর্যের ডানা মেলে রাঙ্গিয়ে রেখেছে । সুর্য উদয়ের সাথে সাথে অপরুপ সুন্দর্য অবলোকন করার জন্য ছুটে আসছে দুর দূরান্ত থেকে জাতীয় ফুল শাপলা প্রেমী দর্শনাথীরা। চেচুয়া বিলের তীরে বসে যেন ফুল প্রেমীদের মিলন মেলা। বিলে সাতড়িয়ে শাপলা ফুলের সাথে নিবীড় প্রেমে আবদ্ব হচ্ছে কিশোররা।ঝলমলে সূর্যের আলোয় যেন রাঙ্গিয়ে উঠে শাপলা বিল।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে বিশাল চেচুয়া বিল যার মধ্যে রয়েছে (৫০একর জমি)এখন সবার মুখেই শাপলা বিল নামে পরিচিত। এ বিলে লাল, সাদা, হলুদ, বেগুনী রংয়ের লাখো শাপলা দেখতে সূর্য উদয় থেকে শুরু করে সুর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে।
এ চেচুয়া বিল এখন সবাই শাপলা বিল নামে চেনেন। এ বিলকে এখন মানুষের ঘুরার জন্য অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এ বিলের শাপলা ফুল সহজে উপভোগ করার জন্য স্থানীয়রা হরেক রকম সৌন্দর্যে নৌকা তৈরী করেছেন। যে কেউ আসলে একবার হলেও বিলের শাপলা অবলোকন করতে মন নাড়া দিবেই।
এ শাপলা বিল দেখতে প্রতিদিন কাকা ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় পর্যটকদের আনাঘোনা। সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, সরকারী আনন্দ মোহন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ শাপলা বিলের সুন্দর্য দেখতে ভিড় জমান।
গত দুই বছর আগে যে বিলের পানি ও মাটিতে সর্ব রোগের ওষুধ জেনে হাজারও লোকের ভীর জমেছিল সে বিলেই ফোটা লাখো শাপলা দেখতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মানুষের ঢল থাকে।
ত্রিশালের এ শাপলার বিল প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে। এ বিলের যতদূর চোখ যায়- শাপলা ফুলের রক্তিম আভার হাতছানি। বিলের পানিতে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল, সাদা, বেগুনী শাপলা। সাথে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। তাই গত এক বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এই সৌন্দর্য দেখতে ভীর জমাচ্ছে এখানে।
শাপলা বিলের পাশেই গড়ে উঠেছে হরেক রকম দোকানসহ খাবারের দোকান। বিলের মাঝখানে বাশের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে শাপলার সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। বিলের মধ্যে দর্শনার্থীদের ঘুরার জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছে নৌকা।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ঘুড়তে আসা কুয়াশা-মৌ দম্পত্তি জানান, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনেকের কাছে শুনে শাপলার সৌন্দর্য দেখতে আসছি। নৌকা দিয়ে পুরো বিলটা ঘুরে দেখে অনেক আনন্দ লাগছে। বাচ্চারাও বায়না ধরেছিল এখানে এসে কাছ থেকে শাপলার সুন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছি। এ এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা যেতে পারে।
শাপলার সৌন্দর্য দেখতে আসা কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী জানান, গত বছর প্রথম আমরা আমাদের সহপাঠির মাধ্যমে এ শাপলা বিলের কথা জানতে পারি। তখনও এসে ছিলাম। কিন্তু তখনকার থেকে এখন শাপলার পরিমান অনেক বেশী। কয়েক রংয়ের শাপলা ফুল ফুটে আছে। সকালের প্রথম সূর্যে শাপলা ফুলে পড়ে আরও সুন্দর্য বৃদ্ধি করে। শীতের সকালের কুয়াশা ও সূর্যের আলোর মিশ্রনে এ শাপলা বিল আরও অনেক সুন্দর হয়ে ফুটে উঠে। শীতকাল আসলে আমরা আবার আসবো।
সারাদেশের মানুষ এ বিলকে চিনেছে একটি অলৌকিক ঘটনার গুজবকে কেন্দ্র করে। একদিন রাত পেরিয়ে সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পায় সেখানে থাকা জমাট বাধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করে ও এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ এই কাঁদা মাখা পথ পেরিয়ে কাঁদা মাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে ভীড় করতে থাকে।
এমন গুজবও ছড়ানো হয়েছিল বিলের পানিতে এক ডুবেই সেরে যাবে যেকোনো রোগ। এখানকার মাটি ও পানি নাকি সর্বরোগের ওষুধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে হাজারো মানুষের তথাকথিত তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল এ চেচুয়া বিল। ঐসময় উপজেলা প্রশাসন, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে চেচুয়া বিলের পানি, মাটি, কচুরিপানা ব্যবহার না করার জন্য প্রথমে মাইকে আহ্বান জানান।
বিলটিতে যেন সারা বছর শাপলা ফুল থাকে তার সৌন্দর্য রক্ষায় বিলে ফুল তুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে সারা বছর মানুষ শাপলা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিবে। দর্শনার্থীদের নিয়মানুবর্তিতায় হয়ত এভাবেই প্রতি বছর বিলটি হয়ে উঠবে একটি সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান হিসেবে, যা ত্রিশাল উপজেলার নতুন দর্শনীয় স্থানের সূচনা করবে।ফুলের বাহারি সুন্দর্য় দেখতে হলে ছুটে আসুন ত্রিশালে ।
যাবেন কিভাবে ? আপনি কি ময়মনসিংহ সদর থেকে দেখতে যাবেন শাপলা বিল তাহলে সদর থেকে শালবনে এসে ত্রিশাল বাসস্টেন্ড নামুন পরে সিএনজি অথবা অটো রিকসা যোগে রামপুর চেচুয়া বিলে চলে যান দেশের যে কোন স্থান থেকে দেখতে আসলে ত্রিশাল বাসষ্টেন্ড নেমে বলবেন শাপলা বিলে যাবো আপনাকে পথ দেখিয়ে দিবে হাজারো শাপলা প্রেমীরা। দেখবেন লাখো শাপলা আপনার জন্য ডানা মেলে সাজিয়ে আছে দাড়িয়ে আছে চেচুয়া বিলে।।