টি-শার্ট রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে টি-শার্ট রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুসারে র‌্যাঙ্কিং রয়্যালসের এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
র‌্যাঙ্কিং রয়্যালসের জরিপে দেখা যায়, টি-শার্ট রফতানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বের ১৫ শতাংশ টি-শার্ট বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়ে থাকে, যার বাজারমূল্য ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের আগে থাকা চীন বিশ্বের ১৬ দশমিক ১ শতাংশ টি-শার্ট রফতানি করে থাকে, যার বাজারমূল্য ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
টি-শার্ট রফতানিতে বাংলাদেশের পর তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি। দেশটি ২০২১ সালে ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টি-শার্ট রফতানি করেছে, যা বিশ্ববাজারে টি-শার্ট রফতানির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

এ ছাড়া চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও ভারত। ২০২১ সালে তুরস্ক ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন, ভিয়েতনাম ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ও ভারত ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানে টি-শার্ট রফতানি করেছে
ভারতের পর যথাক্রমে টি-শার্ট রফতানির তালিকায় রয়েছে ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও স্পেন। তালিকার ১৫ নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ২০২১ সালে ৮৮৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের টি-শার্ট রফতানি করেছে।
২০২১ সালের সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে করা তালিকায় প্রথম ১৫টি দেশ থেকে সারা বিশ্বে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ টি-শার্ট রফতানি হয়ে থাকে।
শুধু টি-শার্ট নয়, র‌্যাঙ্কিং রয়্যালসের আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮৩ শতাংশ রফতানি আয় নির্ভর করে রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্যের ওপর। মূলত সস্তা শ্রম ও বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের হিসাব থেকে দেখা যায়, শুধু গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করেই বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালে এ আয় ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার। মাত্র সাত বছরে এত বড় উল্লম্ফনকে বাংলাদেশের জন্য বড় একটি অর্জন হিসেবে গণ্য করছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।
পোশাক রফতানিতে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। ১৯৯৩ সাল থেকে দেশটি পোশাক রফতানিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্বের প্রায় ৫২ দশমিক ২ শতাংশ পোশাক রফতানি করে চীন। ২০২১ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটির ১২ হাজার ৫৫৭টি প্রধান রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ১ দশমিক শূন্য ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখলেও র‌্যাঙ্কিং রয়্যালসের প্রতিবেদন অনুসারে পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি। দেশটির পোশাকখাতে বার্ষিক রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের পর পোশাক রফতানিতে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে ভিয়েতনাম ও ভারত। ভিয়েতনাম প্রতিবছর ৩৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পোশাক রফতানি করে থাকে। অন্যদিকে পঞ্চম স্থানে থাকা ভারত পোশাক রফতানি করেই আয় করে ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে পোশাকশিল্পকে আরও বিস্তৃত করতে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সাধারণ গার্মেন্টস খাতের পাশাপাশি টেকনিক্যাল গার্মেন্টস খাতের দিকেও বিশেষভাবে নজর দেয়া হচ্ছে।

সাধারণত নিত্যনৈমিত্তিক পোশাকের বাইরে টেকনিক্যাল খাতে (মেডিকেল, সেফটি ড্রেস, হোম অ্যাপ্লাইয়েন্স) যে ধরনের বস্ত্রসামগ্রী ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে টেকনিক্যাল বস্ত্রখাত বলা হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) এক জরিপে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্ববাজারে এই টেকনিক্যাল গার্মেন্টেসের ১৭৯ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে বেড়ে ২২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ক’দিন আগেও বাংলাদেশে একটি কিংবা দুটির বেশি টেকনিক্যাল পোশাক কারখানা ছিল না। বর্তমানে দেশে ২৫টি টেকনিক্যাল পোশাক কারখানা রয়েছে। বিজিএমইএ-র লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য রফতানি করা।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যেখানে জিরো কোভিড পলিসির কারণে চীন থেকে একটির পর একটি অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে, গ্যাসের অভাবে জার্মানির পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম, সেখানে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের এটাই মোক্ষম সময়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে বাংলাদেশকে বহুমুখী জায়গা থেকে পোশাক রফতানি সম্প্রসারণ করতে হবে–এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।