এক প্রকল্পে বদলাবে কৃষকদের ভাগ্য

ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট : মাত্র পৌনে তিন কোটি টাকার এক প্রকল্প বাস্তবায়নে বদলে যাবে হাজারো কৃষকের ভাগ্য। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে স্লুইস গেইটসহ সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গলহর-চেচুয়া খাল পুনঃখনন প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পতিত থাকা শতশত একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে এবং হাজার হাজার মণ ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই খালটি গলহর, রোসকা, গিরমাইল ও চেচুয়া এই চারটি ছোট-বড় বিলের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন ও সংরক্ষণে ব্যবহৃত হবে।

সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চেচুয়া বিল “লাল শাপলার” জন্য সারাদেশ ব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফুলের সমাহার দেখতে আসে এখানে। বিলটি হাজার হাজার মানুষের আনন্দ ভ্রমণের জায়গা হলেও বিল কেন্দ্রিক কৃষকের জন্য ছিল খুবই কষ্টের ও বিষাদের। পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট হওয়ায় বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে শতশত একর জমি তাদের অনাবাদি থেকেছে। বিলে চাষাবাদের জমি আছে কিন্ত উৎপাদন নেই। জমি থেকেও যেন অসহায়ের মতো চলতে হয়েছে কৃষকদের। এই কষ্ট নিয়েই তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বছরের পর বছর পার করেছে।

এখন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় আনন্দে ভাসছে ভুক্তভোগী কৃষক ও তাদের পরিবারের লোকজন। অথচ দীর্ঘদিনে ভরাট হওয়া খাল পুনঃখনন না হওয়ায় পানি নিষ্কাশনে বাঁধা পড়ে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থাকতো বিলের জমিতে, জমাটবদ্ধ থাকতো কচুরিপানা। বিলের কিনারার কিছু জমির পানি নেমে গেলেও কচুরিপানা ভরে থাকতো সেখানেও। সেগুলো সরিয়ে সামান্ন পরিমান জমি চাষাবাদ করা গেলেও তা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।

ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় উপজেলাধীন গলহর গিরমাইল বিল উপ-প্রকল্পের গলহর-চেচুয়া খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির খনন কার্য আগামী বছরের(২০২৪ সাল) আগষ্ট মাসে শেষ হবে। স্লুইস গেইট নির্মানসহ খালটির খনন কার্য শেষ হলে সময় মতো বিল থেকে পানি নিষ্কাশন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। পানি নিষ্কাশন ও সংরক্ষণ হওয়ায় কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ে ধানের আবাদ করতে পারবে। গলহর গিরমাইল বিল সমবায় সমিতি লিমিটেড এর ৬টি গ্রুপ খাল পূনঃখনন কার্যে অংশগ্রহণ করছে। প্রতিটি গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছে।

সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, “এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে গলহর, রোসকা, গিরমাইল ও চেচুয়া এই চার বিলের পাঁচ শতাধিক একর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। অসহায় জীবনযাপন করা হাজারো কৃষকের সুদিন ফিরে আসবে।”

কাঁকচর গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, “জলাবদ্ধতা থাকায় আমাদের অনেক জমি পতিত পড়ে থাকতো। ফলে ধানের আবাদ করতে পারতাম না। খালটি খনন হলে আমাদের আর ধানচাল কিনতে হবেনা।”

ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, “এই প্রকল্পের কাজ দুইটি ভাগে সম্পন্ন হচ্ছে। একটি টেন্ডারের মাধ্যমে অন্যটি সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে। খালের পানি নিষ্কাশন ও প্রয়োজন মতো সংরক্ষণের জন্য একটি স্লুইচ গেইট নির্মান করা হবে। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যার টেন্ডার প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। এছাড়া সমিতির ৬ টি এল সি এস গ্রুপের মাধ্যমে ৯৩ লাখ টাকা ব্যায়ে খাল পূনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি সম্পন্ন হলে ওই এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদলে যাবে।”